দৃঢ় করি ঈমান ::::: এপ্রিল – ’১২

ঈমানের ৭৭ শাখা

মাওলানা হাবীবুল্লাহ আল-কাছেম

ঈমান অর্থ : দৃঢ় বিশ্বাস। শরীয়তের বিষয়সমূহকে অন্তর দিয়ে অকাট্যভাবে বিশ্বাস করা এবং তার পরিপন্থী কোন ধারণা পোষণ না করা, কোন কথা না কথা না বলা এবং কোন আচরণ প্রকাশ না করাকে শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান বলে।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : “ঈমানের ৭৭-এর অধিক শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ শাখা হল-এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং সর্বনিম্নশাখা হল : রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।”(বুখারী ও মুসলিম)

পবিত্রকুরআন ও হাদীসের আলোকে এখানে ঈমানের ৭৭টি শাখা বর্ণনা করা হলো। এসবের প্রতি ঈমান রাখা এবং তদানুযায়ী কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

ঈমানের এই ৭৭টি শাখা তিনভাগে বিভক্ত : ৩০টি কলব তথা অন্তর সম্পর্কিত, ৭টি জবান সম্পর্কিত এবং অবশিষ্ট ৪০টি অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ সম্পর্কিত। এর বিশ্লেষণ নিম্নরূপ :

অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের ৩০টি শাখা

১. আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

২. আল্লাহ ব্যতীত বাকি সব কিছু মাখলুক তথা সৃষ্টজীব এবং ধ্বংসশীল-এ কথা বিশ্বাস করা।

৩. ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনা।

৪. আল্লাহর নাযিলকৃত সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৫. নবী-রাসুলগণের উপর ঈমান আনা।

৬. তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা।

৭. কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনা।

৮. জান্নাতকে বিশ্বাস করা।

৯. জাহান্নামকে বিশ্বাস করা।

১০. আল্লাহর সাথে মহব্বত রাখা।

১১. আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং তার জন্যই কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করা।

১২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে মহব্বত রাখা।

১৩. ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা।

১৪. গুনাহ থেকে তাওবা করা।

১৫. তাকওয়া তথা ভয়-ভীতি অন্তরে বিদ্যমান রাখা।

১৬. আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।

১৭. লজ্জা পোষণ করা।

১৮. নিয়ামতের শোক্র আদায় করা।

১৯. অঙ্গীকার পূর্ণ করা।

২০. ধৈর্য্যধারণ করা।

২১. বিনয় অবলম্বন করা।

২২. মাখলুক তথা সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া ও করুণা করা।

২৩. আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।

২৪. তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।

২৫. অহংকার বর্জন করা।

২৬. ঈর্ষা পরিহার করা।

২৭. হিংসা ত্যাগ করা।

২৮. রাগ-ক্রোধ দমন করা।

২৯. খারাপ চিন্তা পরিহার করা।

৩০. পার্থিব আকর্ষণ ত্যাগ করা।

জবানের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের ৭টি শাখা

৩১. কালিমায়ে তাওহীদ পাঠ করা।

৩২. কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা।

৩৩. ইল্ম অর্জন করা।

৩৪. ইল্ম শিক্ষাদান করা।

৩৫. দু‘আ করা।

৩৬. জিকির করা।

৩৭. অনর্থক ও নিষিদ্ধ কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।

অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের ৪০টি শাখা

অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত ৪০টি শাখাকে আবার তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে : ১৬টি ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত, ছয়টি পরিবার-পরিজন ও অধীনস্থ লোকদের সাথে সম্পৃক্ত এবং বাকি ১৮টি সর্বসাধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ঈমানের ১৬টি শাখা

৩৮. পবিত্রতা অর্জন করা।

৩৯. নামায কায়িম করা।

৪০. সদকা প্রদান করা।

৪১. রোজা রাখা।

৪২. হজ্জ করা।

৪৩. ওমরা পালন করা।

৪৪. ই‘তিক্বাফ করা।

৪৫. হিজরত করা।

৪৬. মান্নত পূর্ণ করা।

৪৭. অঙ্গীকার পূর্ণ করা।

৪৮. কাফ্ফারা আদায় করা।

৪৯. সর্বাবস্থায় সতর ঢেকে রাখা।

৫০. কুরবানী করা।

৫১. মৃতের জানাযায় শরিক হওয়া ও দাফন-কাফন করা।

৫২. ঋণ পরিহার করা।

৫৩. সত্য সাক্ষ্য দেয়া।

পরিবার-পরিজন ও অধীনস্থ লোকদের সাথে সংশ্লিষ্ট ঈমানের ৬টি শাখা

৫৪. বিবাহের মাধ্যমেচরিত্রের নিস্কলুষতা অর্জন করা।

৫৫. পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা।

৫৬. পিতা-মাতার খিদমত করা এবং তাদেরকে কষ্ট না দেয়া।

৫৭. সন্তানদের লালন-পালন করা।

৫৮. আত্মীয়দেরসাথে ভালো ব্যবহার করা।

৫৯. মনিবের আনুগত্য করা।

সর্বসাধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট ঈমানের ১৮টি শাখা

৬০. বিচারে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করা।

৬১. মুসলমান জামা‘আতের আনুগত্য করা।

৬২. বিচারকের রায় মেনে চলা।

৬৩. মানুষের মাঝে সাম্য-প্রীতি বজায় রাখা।

৬৪. ভাল কাজে সাহায্য করা।

৬৫. সৎ কাজে অনুপ্রাণিত করা।

৬৬. অসৎ বিষয় থেকে নিষেধ করা।

৬৭. শরীয়তের হুদুদ প্রতিষ্ঠা করা।

৬৮. আমানত আদায় করা।

৬৯. মুখাপেক্ষীকে ঋণ প্রদান করা।

৭০. প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া।

৭১. সবার সাথে সদাচরণ করা।

৭২. অর্থ-সম্পদ যথাস্থানে ব্যয় করা।

৭৩. সালামের জবাব দেয়া।

৭৪. হাঁচিদাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।

৭৫. মানুষের ক্ষতি না করা।

৭৬. অনর্থক ও বেহুদা কথা থেকে বিরত থাকা।

৭৭. কষ্টদায়ক বস্তু তথা কাঁটা, ইটের টুকরা ইত্যাদি রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া।

(সূত্র : ফাইজুল কালাম, ২০-২১ পৃষ্ঠা)

 

 

 

 

Related posts

Leave a Comment